এম আবদুল হাফিজ
পশ্চাৎপদ দেশগুলোতে অথর্ব সরকারগুলোর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসই উসকে দেয় এমন যুদ্ধকে। তারা এমনও ভাবে যে, প্রতিপক্ষকে এক হাত দেখিয়ে দিতে পেরেছে সরকার। কিন্তু সত্বরই তাদের এই আত্মপ্রসাদ উবে যায় যখন তারা দেখে যে ওই সন্ত্রাসের আগুন গণরোষানলের সঙ্গে একাকার হয়ে তাদের নিভৃত নিরাপদ বাসকেও গ্রাস করতে চলেছে। বিএনপির অপশাসন, অপকৌশল এবং স্ব-আরোপিত শাস্তি নিয়ে এন্তার লেখা হয়েছে, যদিও সেসব থেকে দলটি বিন্দুমাত্র শিক্ষা নেয়নি। একই পথে হাঁটছে আরেক দাম্ভিক নেতৃত্বের অধীন ঐতিহ্যবাহী আওয়ামী লীগ, যার গণবিরোধী সব নীতি ও পদক্ষেপকে মনে হবে যেন দলটি দেশ ও দেশবাসীর বিরুদ্ধেই যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, যা প্রকারান্তরে জাতির নিজের সঙ্গে নিজেরই যুদ্ধের শামিল। আওয়ামী লীগ প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে বিশাল ম্যান্ডেট নিয়ে ২০০৮ সালের প্রদোষলগ্নে ক্ষমতার দুর্গে প্রবেশ করেছিল। অতঃপর প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী সরকারের সিংহভাগ মন্ত্রী-আমলার অনেক স্বপ্ন-সাধ পূর্ণ হয়েছে। রাষ্ট্রীয় আনুকূল্যে অনেকেই কোটিপতি হয়েছেন, যদিও নিন্দুকরা বলে যে কোটি টাকা তো মন্ত্রীর একজন পিএস/এপিএসও রোজগার করে বা ফেনসিডিল-ইয়াবা ফেরি করেও রোজগার হয়। মন্ত্রী-আমলাদের রোজগারের ওই ছকে ফেলা যায় না, সেটি তাদের জন্য মর্যাদাহানিকর।
কথা তো ছিল একটি দারিদ্র্যমুক্ত-বৈষম্যহীন সমাজ নির্মাণের। প্রধানমন্ত্রীসহ দেশের একাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তিও সভা-সেমিনার-টক শোতে বিভিন্ন খাতে অগ্রগতির কথা বলেন। আরও বলেন, আর্থ-সামাজিক অনেক সূচকের ঊর্ধ্বগামিতার কথা। আমারও ওইসব শুনতে ভালো লাগে। কিন্তু সমস্যা যে বাস্তবে তার কোনোটাই খুঁজে পাই না।
পবিত্র রমজান মাসের প্রাক্কালে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারি পদক্ষেপগুলোর দীর্ঘ খতিয়ান সংবাদপত্রে আসতে শুরু করেছে। বিগত বছরগুলোতেও তা আসত, কিন্তু কখনোই আমরা বাজারে তার প্রভাব ঘটতে দেখিনি। অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের ভেতর দিয়ে একই রকম মহার্ঘতার বোঝা ঘাড়ে চাপিয়েই আমাদের পবিত্র মাসটি অতিক্রান্ত হতো। এই চিত্র সমাজের ও দেশের সব ক্ষেত্রেই। কৃচ্ছ্র সাধনের নামে পবিত্র ঈদেও সন্তান-সন্ততির সঙ্গে প্রতারণা ও বঞ্চনার খেলা খেলতে হয়েছে সীমাবদ্ধ আয়ের মানুষকে।
বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভাজিত এ দেশে কর্তৃপক্ষ প্রকারান্তরে জনগণকে বুঝিয়েই দেয় যে_ ঈদ, ইফতার পার্টিসহ রমজান এবং এহেন অনুষ্ঠান উদযাপন মূলত এলিট শ্রেণীর, যাদের ট্যাঁকে আছে ছিনতাই-মুক্তিপণের, উৎকোচ-টেন্ডার বাণিজ্যের বা হাজারো কিসিমের অসদুপায়ে অর্জিত অগুনতি টাকা। এমন বিভাজন ও বিভক্তির একটি জাতি বড়জোর নিজেদের মধ্যেই উচ্ছিষ্ট নিয়ে কলহ করতে পারে, কিন্তু বহিঃশত্রুর বিরুদ্ধে কোনো দুর্ভেদ্য প্রাকার গড়ে তুলতে পারে না। তার জন্য চাই ইস্পাত ঐক্যের একটি জাতি, যার জীবন-দর্শন অভিন্ন এবং কট্টর সমাজতান্ত্রিক সাম্য না থাকলেও যাদের মধ্যে থাকবে আর্থ-সামাজিক সমতা। সেই অবস্থায় আর নেই এই জাতি। গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, অসাম্প্রদায়িকতাসহ সমাজতন্ত্রের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এদেশ অস্তিত্বে এলেও, ছেঁড়া ন্যাকড়ার মতো ছুড়ে ফেলা হয়েছে সমাজতন্ত্রের মহান আদর্শকে এবং তার সঙ্গে উদ্ভব ঘটেছে নব্য ধনিক, নব্য রক্ষণশীলদের। তারা রাষ্ট্রের শেষ সম্বলটুকুও হস্তগত করতে ক্ষমতাসীন বনাম ক্ষমতাসীন দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। অভিবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থ এবং আমাদের সুদক্ষ পোশাক শিল্পীদের শোষণ করে বা তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করে এ নব্য ধনিকরা নির্লজ্জ ভোগবাদ ও কনজ্যুমারিজমে লিপ্ত হয়। এই অস্থিতিশীল বিশৃঙ্খল দেশে তারা নিজেরাই তাদের উপার্জিত অর্থ বিনিয়োগ করতে চায় না। এও এক প্রকার যুদ্ধ, যা দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়।
জাতি নিজের সঙ্গে নিজেই যুদ্ধে লিপ্ত। কিন্তু জাতি তা উপলব্ধি করতে অক্ষম। জনগণ একটি ঘোরের মধ্যে বাস করছে। স্রেফ টিকে থাকার লড়াইয়ে মানুষ নিরন্তর ছুটছে। তার মহৎ কল্যাণকর বা অধিবিদ্যামূলক কিছু ভাবার অবকাশ নেই, যদিও এই প্রচণ্ড গতির যুদ্ধে সে নিজেই বারবার পরাজিত হচ্ছে। দেশ, সমাজ, রাজনীতি নিয়মের নিগড় ভেঙে যে চলার পথ বেছে নিয়েছে, নিয়মের অভাবেই তা তার সাবলীলতাকে ধ্বংস করে তার সৃজনশক্তিকে বাধাগ্রস্ত করবে।
এখনও এ দেশের ভাণ্ডারে যা আছে বা যা উৎপাদিত হতে পারে, যদি নব্য ধনতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণহীন বিকাশের লাগামকে টেনে ধরতে পারি, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শৃঙ্খলাকে ফিরিয়ে আনতে পারি এবং দেশটাকে প্রাণভরে ভালোবাসতে পারি তাহলে সম্ভাবনার সীমা নভোমণ্ডলকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। ঞযবহ ংশু রিষষ নব ড়ঁৎ ড়হষু ষরসরঃ.
ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম আবদুল হাফিজ : সাবেক মহাপরিচালক বিআইআইএসএস ও কলাম লেখক
কথা তো ছিল একটি দারিদ্র্যমুক্ত-বৈষম্যহীন সমাজ নির্মাণের। প্রধানমন্ত্রীসহ দেশের একাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তিও সভা-সেমিনার-টক শোতে বিভিন্ন খাতে অগ্রগতির কথা বলেন। আরও বলেন, আর্থ-সামাজিক অনেক সূচকের ঊর্ধ্বগামিতার কথা। আমারও ওইসব শুনতে ভালো লাগে। কিন্তু সমস্যা যে বাস্তবে তার কোনোটাই খুঁজে পাই না।
পবিত্র রমজান মাসের প্রাক্কালে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারি পদক্ষেপগুলোর দীর্ঘ খতিয়ান সংবাদপত্রে আসতে শুরু করেছে। বিগত বছরগুলোতেও তা আসত, কিন্তু কখনোই আমরা বাজারে তার প্রভাব ঘটতে দেখিনি। অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের ভেতর দিয়ে একই রকম মহার্ঘতার বোঝা ঘাড়ে চাপিয়েই আমাদের পবিত্র মাসটি অতিক্রান্ত হতো। এই চিত্র সমাজের ও দেশের সব ক্ষেত্রেই। কৃচ্ছ্র সাধনের নামে পবিত্র ঈদেও সন্তান-সন্ততির সঙ্গে প্রতারণা ও বঞ্চনার খেলা খেলতে হয়েছে সীমাবদ্ধ আয়ের মানুষকে।
বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভাজিত এ দেশে কর্তৃপক্ষ প্রকারান্তরে জনগণকে বুঝিয়েই দেয় যে_ ঈদ, ইফতার পার্টিসহ রমজান এবং এহেন অনুষ্ঠান উদযাপন মূলত এলিট শ্রেণীর, যাদের ট্যাঁকে আছে ছিনতাই-মুক্তিপণের, উৎকোচ-টেন্ডার বাণিজ্যের বা হাজারো কিসিমের অসদুপায়ে অর্জিত অগুনতি টাকা। এমন বিভাজন ও বিভক্তির একটি জাতি বড়জোর নিজেদের মধ্যেই উচ্ছিষ্ট নিয়ে কলহ করতে পারে, কিন্তু বহিঃশত্রুর বিরুদ্ধে কোনো দুর্ভেদ্য প্রাকার গড়ে তুলতে পারে না। তার জন্য চাই ইস্পাত ঐক্যের একটি জাতি, যার জীবন-দর্শন অভিন্ন এবং কট্টর সমাজতান্ত্রিক সাম্য না থাকলেও যাদের মধ্যে থাকবে আর্থ-সামাজিক সমতা। সেই অবস্থায় আর নেই এই জাতি। গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, অসাম্প্রদায়িকতাসহ সমাজতন্ত্রের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এদেশ অস্তিত্বে এলেও, ছেঁড়া ন্যাকড়ার মতো ছুড়ে ফেলা হয়েছে সমাজতন্ত্রের মহান আদর্শকে এবং তার সঙ্গে উদ্ভব ঘটেছে নব্য ধনিক, নব্য রক্ষণশীলদের। তারা রাষ্ট্রের শেষ সম্বলটুকুও হস্তগত করতে ক্ষমতাসীন বনাম ক্ষমতাসীন দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। অভিবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থ এবং আমাদের সুদক্ষ পোশাক শিল্পীদের শোষণ করে বা তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করে এ নব্য ধনিকরা নির্লজ্জ ভোগবাদ ও কনজ্যুমারিজমে লিপ্ত হয়। এই অস্থিতিশীল বিশৃঙ্খল দেশে তারা নিজেরাই তাদের উপার্জিত অর্থ বিনিয়োগ করতে চায় না। এও এক প্রকার যুদ্ধ, যা দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়।
জাতি নিজের সঙ্গে নিজেই যুদ্ধে লিপ্ত। কিন্তু জাতি তা উপলব্ধি করতে অক্ষম। জনগণ একটি ঘোরের মধ্যে বাস করছে। স্রেফ টিকে থাকার লড়াইয়ে মানুষ নিরন্তর ছুটছে। তার মহৎ কল্যাণকর বা অধিবিদ্যামূলক কিছু ভাবার অবকাশ নেই, যদিও এই প্রচণ্ড গতির যুদ্ধে সে নিজেই বারবার পরাজিত হচ্ছে। দেশ, সমাজ, রাজনীতি নিয়মের নিগড় ভেঙে যে চলার পথ বেছে নিয়েছে, নিয়মের অভাবেই তা তার সাবলীলতাকে ধ্বংস করে তার সৃজনশক্তিকে বাধাগ্রস্ত করবে।
এখনও এ দেশের ভাণ্ডারে যা আছে বা যা উৎপাদিত হতে পারে, যদি নব্য ধনতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণহীন বিকাশের লাগামকে টেনে ধরতে পারি, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শৃঙ্খলাকে ফিরিয়ে আনতে পারি এবং দেশটাকে প্রাণভরে ভালোবাসতে পারি তাহলে সম্ভাবনার সীমা নভোমণ্ডলকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। ঞযবহ ংশু রিষষ নব ড়ঁৎ ড়হষু ষরসরঃ.
ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম আবদুল হাফিজ : সাবেক মহাপরিচালক বিআইআইএসএস ও কলাম লেখক